মাল্টা ও থাই পেয়ারার চাষ করে আশার আলো দেখছেন পেকুয়ার দুই শিক্ষক

এ কে এম ইকবাল ফারুক, চকরিয়া ◑

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জারুলবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মাস্টার নুর মোহাম্মদ কাদেরী ও মো. আলী আকবর। উচ্চ শিক্ষা শেষ করে তারা দুইজনই চাকুরী করছেন পৃথক দুইটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। তৎমধ্যে মাস্টার নুর মোহাম্মদ কাদেরী চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার আনোয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও মো. আলী আকবর আদর্শ তালিমুল কোরআন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম শাখায় শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। শিক্ষক হয়েও তারা নিজেদের ভাগ্য বদল ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে বিভন্ন ফলজ বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে।

তারই ধারাবাহিকতায় পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের সাপেরগারা এলাকায় ২ একর পাহাড়ি জমি নিয়ে দুই বছর পূর্বে শুরু করেন উন্নত জাতের বারি মাল্টা-১ ও থাই-৫ জাতের পেয়ারার চাষ।

শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি অবসর সময়েই তারা শ্রমিক দিয়ে এ ফলজ বাগান সৃজন করেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে প্রাথমিক পর্যায়ে তারা বাগানে পাঁচশত উন্নত জাতের মাল্টা ও পাঁচশত পেয়ারা গাছ রোপনের পাশাপাশি উন্নত জাতের আরো প্রায় দেড় শতাধিক সরিফা, কমলা, লটকন ও বারোমাসি লেবুর চারা রোপন করেন। পরিপূর্ণভাবে এ বাগানটি গুছিয়ে নিতে তাদের ব্যয় হয়েছে প্রায় পঁাচ লাখ টাকা। উন্নত জাতের থাই-৫ জাতের পেয়ারা গাছ রোপনের ৬ মাসের মধ্যেই তাদের বাগানে ফলন আসতে শুরু করে। এ পর্যন্ত তারা শুধু পেয়ারা বাগান থেকেই আয় করেছেন প্রায় দুই লাখ টাকা। সাধারণত এ জাতের পেয়ারা মজাদার ও সু-স্বাদু হওয়ায় বাজারেও এর কদর অন্যান্য জাতের পেয়ারার চেয়ে একটু বেশি। এছাড়া চারা রোপনের দুই বছর সময় পার হওয়ায় বারী মাল্টা-১ জাতের মাল্টা গাছেও ফলন আসতে শুরু করেছে। কৃষি বিভাগের সার্বক্ষণিক পরামর্শ, দক্ষ পরিচর্চা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বর্তমানে তাদের বাগানে বাম্পার ফলন আসতে শুরু করেছে। আর বাগানের আশাতীত সাফল্যেও দারুণ খুশি কর্মৎদ্যোমী এই দুই শিক্ষক। ফলজ বাগানে বিনিয়োগ খরচ প্রথম দুই বছরেই উঠে গিয়ে অতিরিক্ত লাভের আশা দেখছেন শিক্ষক নুর মোহাম্মদ কাদেরী ও মো. আলী আকবর।

সফল চাষী শিক্ষক মো. আলী আকবর ও নুর মোহাম্মদ কাদেরী বলেন, মধ্যযুগের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ছিলো কৃষি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষ বিভিন্ন প্রযুক্তির উপর নির্ভর হয়ে উঠলেও এখনো দেশের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। বর্তমান সরকার জিডিপি বৃদ্ধি ও দেশের অর্থনীতির চাঁকা সচল রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি খাতের উপর ব্যাপক জোর দিচ্ছে। কৃষির উন্নয়নে সরকারের নানা উদ্যোগ ইতোমধ্যে তরুণ থেকে শুরু করে সকলস্থরের মানুষের কাছে ব্যাপক সাঁড়া ফেলেছে। সরকারে এসব উদ্যোগের কথা জেনে উৎসাহিত হওয়ার পর দুই বন্ধু মিলে শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন উন্নত জাতের ফলজ বাগান করার উদ্যোগ নিই। তারই অংশ হিসেবে প্রায় পঁাচ লাখ টাকা ব্যয়ে বানিজ্যিকভাবে শুরু করি সমন্বিত ফলজ বাগান। কৃষি বিভাগের পরামর্শ, শ্রমিক দিয়ে দক্ষ পরিচর্চা এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বর্তমানে পেয়ারা ও মাল্টা গাছে এসেছে বাম্পার ফলন। প্রথম দুই বছরেই বিনিয়োগ খরচ উঠে গিয়ে অতিরিক্ত লাভের আশা দেখছেন জানান কর্মৎদ্যোমী দুই শিক্ষক নুর মোহাম্মদ কাদেরী ও মো. আলী আকবর।

শিক্ষক মো. আলী আকবর আরও বলেন, একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করার পরও কোন কর্মকে ছোট না ভেবে অর্থনৈতিকভাবে নিজেদেরকে স্বালম্বী করতে বাণিজ্যিকভাবে এ ফলজ বাগান করার সিদ্বান্ত নেন তারা দুইবন্ধু। তাদের এ অন্যন্য উদ্যোগ শিক্ষিত বেকার যুবকদের আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি।

সফল চাষী শিক্ষক মো. আলী আকবর বলেন, বারী মাল্টা-১ জাতের ফল সু-স্বাদু হওয়ায় বাজারেও এর চাহিদা অন্যান্য জাতের মাল্টার চেয়ে বেশি। সাধারণত এ জাতের প্রতিকেজি মাল্টা পাইকারী বাজারে ১২০-১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। গাছ রোপনের দুই বছর পর থেকেই মাল্টা গাছে আশাতীত ফলন আসতে শুরু করে। আর থাই-৫ জাতের পেয়ারার চারা রোপনের ছয় মাস পর থেকে গাছে ফলন আসতে শুরু করে। থাই ৫ জাতের প্রতিটি পেয়ারাও ওজন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ জাতের ফল সু-স্বাদু হওয়ায় বাজারেও এর চাহিদা অন্যান্য জাতের পেয়ারার চেয়ে বেশি। প্রতিকেটি পেয়ারা পাইকারী বাজারে ৪৫-৫০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলেও জানান তিনি। এ পর্যন্ত শুধু পেয়ারা বাগান থেকেই প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করেছেন বলে জানান সফল চাষী শিক্ষক মো. আলী আকবর।

পেকুয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া কৃষি ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অপরূপ দে বলেন, জারুলবুনিয়া এলাকার দুই শিক্ষক মিলে বানিজ্যিকভাবে একটি ফলজ বাগান করার জন্য উদ্যোগ নিলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় এর নির্দেশে আমি তাদেরকে এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করে উদ্যোগি করে তুলি। পরবর্তীতে তারা ফলজ চারা রোপন কালেও বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়। বর্তমানে এসব ফলজ বৃক্ষ থেকে ফলন আসতে শুরু করেছে। উদ্যোক্তারা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকার পরও অবসর সময়ে তাদের এ ধরণের কাজ বর্তমান সময়ের যুব সমাজকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত: এ ধরনের উদ্যোগ খুব কমই পরিলক্ষিত হয়। কোন কর্মকে ছোট না দেখে নিজেদেরকে স্ববলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষক মো. আলী আকবর ও নুর মোহাম্মদ কাদেরীর এ ধরনের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।

পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় বলেন, পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি জনপদ সাপেরগারা এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে বানিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা উন্নত ফলজ বাগানের সার্বক্ষণিক দেখভাল করা জন্য ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলজ বাগানে কোন ধরণের রোগ বালাইয়ের সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষনাত উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করা জন্য বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পেকুয়াকে সমৃদ্ধশালী উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। কর্মৎদ্যোমী দুই শিক্ষকের এ ধরণের উদ্যোগ অন্যান্যদের স্বাবলম্বী করতে নতুন করে স্বপ্ন দেখাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।